বুখারী, মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন দরিদ্র সাহাবীকে তার সাথে থাকা কোরআনের মাধ্যমে তাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে দিয়েছিলেন।
কে আছে এমন, যে আজকের দিনে আমাদের সমাজে আবারো এই সুন্নতটিকে বাস্তবায় করবেন? কে আছে এমন, যে মুত্তাকী ছেলের সাথে তার মেয়েকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করিয়ে দিবেন?
তারীখের কিতাবে প্রখ্যাত তাবেয়ীন সাঈদ ইবনুল মুসাইব-এর একাটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে,
সাঈদ উবনুল মুসইব তিনি ছিলেন জগত বিখ্যাত আলেমে-দ্বীন। তাঁর মজলিসে সবসময় হাজার-হাজার ছাত্র থাকত। সবাই তাঁর থেকে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করত।
একদিন তিনি তার কোন একজন ছাত্রকে খোজ করছিলেন। কিন্তু তিনি তাকে খুজে পাচ্ছিলেন না। কয়েকদিন পর সে যখন মজলিশে আসল তখন সাঈদ ইবনুল মুসাইব তাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু আদা’আ তুমি কয়েকদিন যাবৎ কোথায় ছিলে?
সে বলল, আমার স্ত্রী মারা গিয়েছিল। তাই তার কারনে দাফন-কাফনে ব্যস্ত ছিলাম।
সাঈদ ইবনুল মুসাইব বললেন, তুমি আমাদেরকে কেন খবর দিলে না? জানলে তো আমরাও জানাজায় উপস্থিত হতাম। তখন তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন তুমি কি আর বিয়ে করবে না?
সে বলল, আমার মত তিন দিরহামের মালিকের কাছে কে তার মেয়েকে বিয়ে দিবে?
সাঈদ ইবনুল মুসাইব বললেন, সুবহান আল্লাহ্! তিন দিরহাম! এটাতো অনেক সম্পদ!
সে বলল, না। তিন দিরহামের কথা শুনলে কেউই আমার কাছে তার মেয়েকে বিয়ে দিবে না।
তখন সাঈদ ইবনুল মুসাইব বললেন, ঠিক আছে আমি দিব। আমি আমার মেয়েকে তোমার কাছে বিয়ে দিব।
সাঈস ইবনুল মুসাইবের মেয়ে ছিল অত্যান্ত সুন্দরী। সেই সময়ের রাজ-পরিবারের লোকেরা এবং সম্ভ্রান্ত বংশের লোকেরা তাঁর মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতো। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করে দিতেন। কারন তিনি ধন-সম্পদের উপর দ্বীনদারীকে প্রাধান্য দিতেন।
তিনি তাঁর মেয়ের জন্য একজন উত্তম চরিত্রের অধিকারী ও দ্বীনদার পাত্র খোজ করছিলেন। কেননা তাঁর কন্যা হল আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর কাছে একটি আমানত। এজন্যই তিনি এমন একজন ব্যক্তিকে খোজ করছিলেন যে এই আমানতের হক ঠিকমত আদায় করতে পারবে।
সাঈদ ইবনুল মুসাইব দ্রুত ঘরে গেলেন এবং ঘরে যেয়ে মেয়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আসলেন। মজলিসে এসে তিনি সকলকে সমবেত করলেন এবং তাদের সামনে দাড়িয়ে খুতবা দিলেন এবং ঘোষনা করলেন, হে লোক সকল! তোমরা স্বাক্ষী থাক, হে লোক সকল! তোমরা স্বাক্ষী থাক, দুই দিরহাম মোহরনার বিনিময়ে অমুকের পুত্র অমুকের সাথে আমি আমার মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছি। বিবাহ সম্পন্ন হল।
যুবক বলেন, বিবাহের পর আমি খুবই আনন্দিত হলাম। সেদিন আমি রোজা রেখে ছিলাম। সূর্য ডুবার উপক্রম হয়ে গেল। তাই আমি ইফতার করার জন্য দ্রুত বাড়িতে ছুটে গেলাম।
আমি ইফতার করার জন্য রুটি সামনে নিয়ে বসলাম এমন সময় শব্দ পেলাম কে যেন দরজার কড়া নাড়ছে। আমি জিজ্ঞাস করলাম কে? দরজার ওপাড় থেকে আওয়াজ আসল, আমি সাঈদ! আমি বুঝতে পারলাম সাঈদ ইবনুল মুসাইব এসেছেন। আমি আশ্চর্যান্বিত হলাম।
যে সাঈদ ইবনুল মুসাইবকে চল্লিশ বছর যাবৎ আমি ঘর এবং মসজিদের বাইরে আর কোথাও দেখিনি। আজকে সে এত কষ্ট করে আমার বাড়িতে কেন আসলেন? সে কি তাঁর মেয়ের বিবাহের ব্যাপারে মত পাল্টাতে এসেছেন? আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম এবং চিন্তা করতে করতে দরজা খুলে দিলাম।
দেখলাম সাঈদ ইবনুল মুসাইব দাড়িয়ে আছেন। আমি তাঁকে বললাম, এত কষ্ট করে আপনি কেন এসেছেন? আমাকে বললেই তো আমি যেতে পারতাম।
তখন তিনি বললেন, না, আজকে আমারই আসার প্রয়োজন ছিল। তিনি বললেন, আমি চিন্তা করলাম সবে মাত্র আজকে তোমাদের বিয়ে হল, আর বিয়ের রাতে তুমি একাকি থাকবে? তাই আমি আমার মেয়েকে নিয়ে এসেছি। আজ থেকে তোমার স্ত্রী তোমার কাছেই থাকবে।
একথা বলে তিনি তাঁর মেয়েকে ঘরে প্রবেশ করিয়ে দিলেন এবং আমাদের জন্য দোয়া করলেন : আল্লাহ্ তা’য়ালা! তোমাদের বৈবাহিক জিবনে বরকত দান করুন এবং তোমাদের মাঝে ভালবাসার বন্ধন তৈরী করে দিন।
যুবক বলেন, তারপর আমি এই প্রথম বারের মত তার দিকে তাকালাম। সে এতোই সুন্দরী ছিল যে এতো সুন্দরী মেয়ে আমি ইতিপূর্বে আর কখনোই দেখিনি।
আমি দ্রুত বাড়ির ভিতরে গেলাম। আমার মাকে ডাকলাম এবং তাকে সংবাদ দিলাম যে প্রখ্যাত মুহাদ্দিস সাঈদ ইবনুল মুসাইব তাঁর মেয়েকে আমার সাথে বিবাহ দিয়েছেন এবং তাঁর মেয়েকে আমাদের বাড়িতে দিয়ে গেছেন। তখন মা বললেন, আলহামদুলিল্লাহ্! এটাতে খুশির খবর! তবে এখন কথা হচ্ছে বাসর ঘরকে সুসজ্জিত কারার আগে তুমি তার কাছে যাবে না।
অতঃপর বাসর ঘরকে সুসজ্জিত করা হল এবং আমি তার কাছে গেলাম। আল্লাহর কছম করে বলছি, আমি তার চেয়ে সুন্দর মানুষ আর কখনোই দেখিনি। সে যখন কথা বলত তখন উত্তম কথা বলত আর প্রয়োজন ছাড়া সে চুপ থাকত। আমি তার সাথে দীর্ঘ একমাস কাটালাম। এই দীর্ঘ সময়ে সে সর্বদাই ইবাদতে মশগুল ছিল।
একমাস পর আমি সাঈদ ইবনুল মুসাইবের মজলিশে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।
সে আমাকে জিজ্ঞাসা করল, আপনি কোথায় যাচ্ছেন? আমি বললাম, ইলমে দ্বীন শিক্ষার জন্য সাঈদ ইবনুল মুসাইবের মজলিশে যাচ্ছি। তখন সে বলল, এতে দূর যাওয়ার কি দরকার আমার কাছে বসে পড়ুন। সাঈদ ইবনুল মুসাইবের সব ইলম আমার কাছে আছে। ইনশা আল্লাহ্! আপনাকে সব শিখিয়ে দিব।
অতঃপর আমি আরো একমাস পর সাঈদ ইবনুল মুসাইব এর মজলিসে যেয়ে উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে দেখে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন এবং মজলিশ শেষে আমাকে তাঁর কাছে নিয়ে বসালেন এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মেহমানের খবর কি? তোমরা তাকে কেমন পেলে? আমি বললাম আলহামদুলিল্লাহ্। সে ভাল আছে এবং আমরা তাকে অনেক উত্তম পেয়েছি।
অতঃপর তিনি আমাকে বিশ হজার দিনারের একটি থলে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, নাও এই টাকা গুলোকে তোমাদের পারিবারিক প্রয়োজনে খরচ করবে।
আজকে আমাদের সমাজে সাঈদ ইবনুল মুসাইবের মত লোকেরা কোথায়? আজকে আমাদের সমাজে সাঈদ ইবনুল মুসাইবের মত লোকেরা কোথায়? যারা মুসলিম যুবকদের সাথে তাঁদের কন্যাদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করিয়ে দিবেন। যারা মুসলিম যুবকদের চরিত্রকে হেফাজতের ব্যবস্থা করে দিবেন।
আমাদের কর্পোরেট মিডিয়া ও টিভি চ্যানেল গুলো আমাদের যুবকদের চরিত্র ধ্বংস করে দিচ্ছে। আজকে মুসলিম যুবকদের চরিত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অর্থের অভাবে তারা বিয়ে করতে পারছে না। অথচ আমরা দিনের পর দিন বিয়েকে ব্যয়বহুল ও কঠিন করে তুলছি।
হে আল্লাহর বান্দারা! আল্লাহকে ভয় করুন। বিয়েকে সহজ করে দিন। হে আল্লাহর বান্দারা! আল্লাহকে ভয় করুন। বিয়েকে সহজ করে দিন। সমাজকে পাপচার ও অশ্লীলতা থেকে রক্ষা করুন।